1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

পৌরসভায় মেয়রের ব্যবসা: তাই গাছ কেটে সাবাড়!

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩
  • ২০৭৫ বার পঠিত

বিশেষ প্রতিনিধি: কমলগঞ্জ পৌরসভায় পৌর ভবনের সামনে বিশাল একটা অর্জুন গাছ সেখানে গাছের উপর থেকে নিচে একসাথে চলছে কাটাকাটির কাজ। যত দ্রুত সম্ভব বিশাল এই গাছটিকে কর্তন করার জন্য চলে তোড়জোর। পৌর ভবনের মূলফটক থেকে কিছু সময়ের ভেতরে গাছটি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হল। গাছ কাটার শ্রমিকরা জানেন না কে এইসব গাছের মালিক। তারা দেখিয়ে দিলেন জনৈক এক ব্যক্তিকে তিনি গাছ কাটার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন । সাংবাদিক পরিচয় দিতেই দ্রুত পালিয়ে গেলেন তিনি।

পরে স্থানীয় পৌরসভা, বনবিভাগ ও সওজে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো গাছ কাটছেন পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, জায়গাটি সওজের এবং মেয়র বনবিভাগের কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে এই গাছ কাটার পারমিশন নিয়েছেন এবং ১২৯ টি গাছ কেটে ফেলছেন যার মধ্যে ১২৮টি অর্জুন গাছ। যদিও গাছ কাটার কারণ নিয়ে একটি অফিসের তথ্যের সাথে মিল নেই আরেকটি অফিসের এবং গাছ কাটার কারণ নিয়েও রয়েছে লুকোচুরি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে তাদের কোন প্রকল্প নেই বা রাস্তা বড় করার মত কোন কাজও নেই তাই তাদের প্রয়োজনে গাছ কাটা হয় নি। মেয়র বিদেশ ভ্রমনে । তবে ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র জানালেন, জনগনের সুবিধার জন্য কাটা হচ্ছে যদিও কি সুবিধা তা তিনি বলতে পারেন নি। এইদিকে বনবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন নিয়ম মেনে সামাজিক বনের গাছ কাটার সময় হয়েছে তাই মেয়র মো. জুয়েল নিলামে অংশ নিয়ে এই গাছ কাটার অনুমোদন পেয়েছেন৷ তবে আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, পৌরসভার আবেদনের প্রেক্ষিতে তারা সামান্য কিছু গাছ কাটার অনুমোদন দিয়েছেন।
তবে এখানে স্থানীয় মেয়র জড়িত এবং তিনি আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন গাছ বিক্রি করে তা উঠে এসেছে সবার দেওয়া তথ্যে।
বন বিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক মারুফ মিয়া জানান, এই গাছগুলো বনবিভাগ লাগিয়েছিল সওজের জায়গাতে এবং এই গাছ রক্ষনাবেক্ষনের জন্য যারা উপকারভোগী ছিলেন তারা এই গাছের মুল্য পাবেন। গাছগুলো বিক্রির নিলাম হয় সিলেট বনবিভাগের অফিস থেকে সেখানে পৌর মেয়র জুয়েল আহমেদ অংশ নেন এবং তিনি তা ক্রয় করেন। এখানে আবার বনায়ন করা হবে।
বিভাগী বন কর্মকর্তা তৌফিক আহমদ জানিয়েছেন, কমলগঞ্জ পৌরসভা কয়েকটি গাছ কাটার পারমিশন চাইলে তারা গাছ কাটার পারমিশন দিয়েছেন।
তবে নিজের লাভের কারণে পৌরসভার বড় বড় গাছ কেটে সৌন্দর্য্য নষ্ট করাকে পৌরবাসীর চেয়ে নিজের আর্থিক লাভকেই বড় করে দেখছেন বলে মনে করছেন পৌরসভার সচেতন নাগরিকদের একপক্ষ যদিও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না। বিভিন্ন অফিসের তথ্যেও রয়েছে গড়মিল।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ পয়েন্ট থেকে পৌর ভবনের সামনে দিয়ে লাউয়াছড়া হয়ে শ্রীমঙ্গল যে সড়কটি গিয়েছে সেটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিনে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই জায়গাতে বৃক্ষরোপন করে বন বিভাগ। হঠাত করেই রাস্তার দুই পাশে থাকা ১২৯ টি গাছ কাটা শুরু হয় যার মধ্যে ১২৮ টি গাছ ছিল অর্জুন এবং একটি রেইন ট্রি। রাস্তার দুই পাশে পরে আছে কাটা গাছ। ট্রাকে তুলে শ্রমিকরা নিয়ে যাচ্ছেন। গাছ কাটার দায়িত্ব থাকা ম্যানেজার সাংবাদিক পরিচয় পেলে পালিয়ে যান পরে পৌর কতৃপক্ষের সাথে গাছ কাটার বিষয় নিয়ে আলাপ চলাকালে ১ ঘণ্টা পরে ফিরে আসেন এবং অনুমোদের একটি কপি দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। পরে সেই অনুমোদনের কাগজ খুলে দেখা যায় সেটি অন্য একটি জায়গার অনুমোদনের কাগজ যদিও এখানেও অনুমোদন রয়েছে মেয়রের নামে কামাছড়া বিটে।
ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনসার শুকুর মান্না জানান, কার নামে গাছের নিলাম বলতে পারছিনা তবে গাছগুলো জনগনের সেবার প্রয়োজনে কাটা হচ্ছে। এই দিক দিয়ে পানির লাইন যাবে। গাছের বিষয়ে তিনিও সচেতন বলেও জানান।
অন্য একটি সুত্র জানিয়েছে আরো ২০০ গাছ কাটা হবে যা পৌর সভার পরের ব্রিজ থেকে লাউয়াছড়া অভিমুখি রাস্তার দিকে এখন দাঁড়িয়ে আছে।

তবে পরিবেশবাদীরা বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন। কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মনজুর আহমদ আজাদ মান্না বলেন, অর্জুন গাছের বাতাস খুবই উপকারী, এছাড়া এর প্রতিটি অংশই ঔষধি গুণ সম্পন্ন। ছোট বেলা থেকেই গাছগুলো দেখছি। আজ হঠাৎ গাছ কাটা হচ্ছে দেখে খুবই কষ্ট পেয়েছি। শুনলাম পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য বনবিভাগ এটা কাটার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু গাছগুলো না কেটে ড্রেনেজের জন্য পৌরসভা যদি আধুনিক কোনো প্রকল্প গ্রহণ করতো, তাহলে সেটা প্রশংসনীয় হতো। সর্বোপরি, আমি এই গাছ কাটার একেবারেই বিরুদ্ধাচারণ করছি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কার্যনির্বাহী কমিটির সহস্য আব্দুল করিম কিম জানান, যেখানে পৌর মেয়র নিজেই গাছ ব্যবসায়ী এবং উনি এই গাছ কাটার নিলাম নিয়েছেন সেখানে তিনি গাছ কাটবেন লাভ করবেন সেখানে আর কার কাছে কি আশা করতে পারেন? একজন মানুষ কতটা লোভ থাকলে নিজের অফিসের ফটকের গাছটাও কেটে ফেলতে পারে তার প্রমাণ এই ঘটনা।
অতিতের ঘটনাগুলো মিলালে আমরা দেখি যে, প্রভাবশালীরাই গাছ কাটে বিভিন্ন অযুহাতে। এখানেও নিশ্চয় মেয়র তার পদের প্রভাব দেখিয়ে এই গাছ কর্তন করেছেন।

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..